“আমরা ছাড়া কে পেরেছে মায়ের ভাষাকে এমন করে ভালবাসতে। আমরা ছাড়া কে পেরেছে ভাষার জন্য প্রান বিলিয়ে দিতে” |
মাতৃভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় জীবন উৎসর্গ করা জাতির শ্রেষ্ট সন্তানদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা আর কৃতজ্ঞতা জানিয়ে প্রতিবছরের মত এবারো ক্যাম্বেলটাউন বাংলা স্কুল আয়োজন করেছিল অমর একুশে ( আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ) এর অনুষ্ঠান। ২৫ শে ফেব্রুয়ারি রবিবার স্কুল প্রাঙ্গনে ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক, অভিভাবক এবং
কার্যকরী কমিটির সদস্যরা উপস্থিত থেকে ভাষা সংগ্রামীদের স্মরণ করে।
সদ্যপ্রয়াত ভাষা সংগ্রামী, বাংলাদেশের জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের প্রথম সচিব, বরেণ্য সমাজকর্মী কাজী আনিসুর রহমান এর স্মৃতিতে বাংলা স্কুলের এবারের একুশের আয়োজন
উৎসর্গ করা হয়। এই ভাষা সৈনিকের বর্ণাঢ্য ও কর্মময় জীবনের উপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। বাংলা স্কুল সাধারণ সম্পাদক কাজী আশফাক রহমান তার পিতাকে এই আয়োজন
উৎসর্গ করার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বাবার মানবিক ও জনহিতৈষী ভাবনার ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ করেন।
সকাল সাড়ে দশটায় প্রভাত ফেরির মাধ্যমে দিনের অনুষ্ঠান সুচির সূচনা ঘটে। প্রভাত ফেরিটি স্কুলের খেলার মাঠ থেকে শুরু হয়ে পুরো স্কুল প্রদক্ষিণ করে শহীদ মিনারের বেদীমূলে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে।
সকাল এগারোটায় বাংলা স্কুল সাধারন সম্পাদক কাজী আশফাক রহমান সবাইকে অমর একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ২০২৪ এ সবাইকে স্বাগত জানান। তারপর সবাই দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় সংগীত গেয়ে সন্মান প্রদর্শন করেন | এই পর্যায়ে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি প্রসারে অসামান্য অবদান রাখা বিশিষ্ট সমাজ কর্মী, ক্যাম্বেলটাউন বাংলা স্কুলের সাবেক সভাপতি, প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ, সমাজকর্মী ডক্টর খায়রুল চৌধুরীর হাতে একুশে সম্মাননা ২০২৪ তুলে দেয়া হয়। এর পরপরই সহ সভাপতি
ফায়সাল খালিদ শুভ এর সভাপতিত্বে একুশের গুরুত্ব ও তাৎপর্য শীর্ষক একটি আলোচনা পর্ব উপস্থাপিত হয়। ব্যস্ততার কারণে অনুষ্ঠানে সরাসরি উপস্থিত থাকতে না পারলেও, শুভেচ্ছা বক্তব্য লিখে পাঠান স্থানীয় সংসদ সদস্য আনুলাক চানটিভং ও ক্যাম্বেলটাউন সিটি কাউন্সিলের মেয়র জর্জ গ্রিইস। বাংলা ভাষার গুরুত্বের উপর আলোকপাত করেন ক্যাম্বেলটাউন সিটি কাউন্সিলের ডেপুটি মেয়র ইব্রাহিম খলিল মাসুদ। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন ব্যবস্থাপনা পর্ষদ সদস্য আবদুল জলিল, শাহ আলম সৈয়দ, সাবেক সভাপতি গোলাম মাওলা, সাবেক সভাপতি ও ক্যাম্বেলটাউন সিটি কাউন্সিলার মাসুদ চৌধুরী এবং সমাজকর্মী ও রাজনীতিবিদ আশিক রহমান অ্যাশ।
এই পর্ব শেষে বাংলা স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা একটি অনবদ্য সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মাধ্যমে ভাষা সংগ্রামীদের শ্রদ্ধা জানায়। একক আবৃত্তি, একক গান, বৃন্দ আবৃত্তি এবং সমবেত সংগীতের প্রতিটিতে স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা তাদের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখতে সমর্থ হয়। পরিবেশনায় অংশ নেয় স্বপ্নীল, স্বাধীন, মারজান, জেইনা, জাহিয়া,ইমরান,
সূহানা, মুহাইমিন, সাজফা, মুন্নাজ্জাহ, অনিরুদ্ধ, নাশভা, রুকসার, নাজিফা, নুসাইবা, মাহরুস, জারিফ, জারিফা, নুসাইবা হক, অর্ণা, জারিফ, রাইনা,ঈশাম, সুহানা, নাশিয়া, সোহারদিতি, ইয়ারা, অস্কার, রাইয়ান, অলিভিয়া, সিমরিন, ইয়াশফিন, আরিজ ও আদ্য। দাদা নাতনিদের একটি পরিবেশনা নিয়ে আসেন ব্যবস্থাপনা পর্ষদ সদস্য নাজমুল খান ও তাঁর নাতনি জেইনা ও জাহিয়া। বাংলা স্কুলের শিক্ষক নুসরাত মৌরি ও তাঁর কন্যা বাংলা স্কুল ছাত্রী নুসাইবা। মহান ভাষা আন্দোলনকে উপজীব্য করে পূর্বে ধারণকৃত দুটি চমৎকার ক্ষুদ্র নাটিকাপ্রদর্শন করা হয়
যা উপস্থিত দর্শকদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি করে। নাটক দুটির রচনা ও নির্দেশনায় ছিলেন মসিউল আজম খান স্বপন।এই পর্বের শেষে অধ্যক্ষ রুমানা খান মোনার বাংলা স্কুলের অর্জন ও সাফল্যের ইতিবৃত্ত তুলে ধরেন। এই পর্বের সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন শিক্ষক অনিতা মন্ডল। পরিচালনা করেন শায়লা ইয়াসমিন নুসরাত, অনজুমান আরা আইরিন, সায়মা হক,নুসরাত মৌরি ও নুসরাত লিন্ডা।
শেষ পর্বে পরিবেশনা নিয়ে আসেন সিডনির বরেণ্য শিল্পীবৃন্দ। গানে গানে শ্রদ্ধা জানান ফারিয়া আহমেদ, লামিয়া আহমেদ, মিঠু
স্বপ্ন, নাজমুল আহসান খান ও ফায়সাল খালিদ শুভ। কবিতায় শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন মৌমিতা চৌধুরী ও তাঁর কন্যা মেহুলী বোস এবং আজিম সাগর ও ফারহানা বীথি দম্পতি। পুরো অনুষ্ঠান জুড়ে তবলায় সংগত করেন স্কুলের নিজস্ব শিল্পী ও সংগীত শিক্ষক
বিজয় সাহা। এই পর্বটি সঞ্চালনা করেন কাজী আশফাক রহমান।
শব্দ নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করেন স্কুলের কার্যকরী কমিটির সহ সভাপতি ফয়সাল খালিদ শুভ ও ব্যবস্থাপনা পর্ষদ সদস্য নাজমুল আহসান খান। কারিগরী নিয়ন্ত্রণে ছিলেন রাফায়েল রোজারিও।শহীদ মিনার নির্মাণ ও মঞ্চ সজ্জার দায়িত্ব পালন করেন ইয়াকুব, রাফায়েল, স্বপন, শুভ, শাহিন ও আজিজ।
। সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন ইয়াকুব আলী ও নুরুল ইসলাম শাহিন।আপ্যায়ন ছিলেন সংগীত, শাহীন, টপি, সম্প্রীতি, নূরীণ, সৃজা, আলিশা, তাহিয়া, তানিয়া ও দৃপ্ত। পুরো আয়োজন জুড়ে বাংলা বইয়ের পসরা নিয়ে আসে প্রশান্ত পাড়ের প্রথম বাংলা বইয়ের দোকান প্রশান্তিকা প্রকাশনী। অনুষ্ঠান শেষে সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান বাংলা স্কুল সভাপতি মশিউল আজম খান স্বপন।
প্রধান সমন্বয়কারী নাজমুল আহসান খানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে বাংলা স্কুলের অমর একুশে ( আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ) এর এবারের আয়োজন দুপুর দুইটায় শেষ হয়।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য ক্যাম্বেলটাউন বাংলা স্কুল প্রতি রবিবার সকাল দশটা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সব বাংলা ভাষাভাষীর জন্য উন্মুক্ত থাকে।